প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় ৮ প্রার্থী, আলোচনায়-৩

আল হাছিব তাপাদার:: ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদে আসনে আওয়ামীলীগ. জাতীয় পার্টি, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টসহ ৮জন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন।

সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দ রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম।

নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবেক এমপি আলহাজ্ব ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি ও বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ফয়জুল মুনির চেীধুরী (সিংহ), ইসলামী ঐক্যজোট এম এ মতিন চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. শহিদ আহমদ চৌধুরী (হারিকেন), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ’র মো. নুরুল আমিন (হাত পাখা), গণ ফোরাম’র মো. বাহার উদ্দিন আল রাজী (উদীয়মান সূর্য) প্রতীক পেয়েছেন।

প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। গানে-গীতে সমর্থকরা প্রার্থীদের গুনগান গেয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। ভোটের আমেজ শুরু হয়েছে সীমান্তের গ্রাম’গঞ্জে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও জাপার প্রার্থী নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন। এরমধ্যে আওয়ামীলীগে রয়েছেন সিংহ প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরী। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টে একক প্রার্থী। ভোটারদের ধারণা লড়াই হবে ত্রিমুখী। নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষের মধ্যেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে পারবেন না। জকিগঞ্জ-কানাইঘাট নৌকা ঘাটি। সাধারণ মানুষের কাছে নৌকার প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটসহ বৃহত্তর সিলেটে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্ট শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বিগত সময়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন এ জন্য সকল মহলেই তিনি প্রশংসিত। ব্যক্তি হাফিজ আহমদ মজুমদারকে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ভালোবাসে। উন্নয়নের স্বার্থে সাধারণ ভোটার নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ। এদিকে এ আসনটি মহাজোটের বাইরে থাকায় লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্ঠা বর্তমান এমপি সেলিম উদ্দিন। বিগত নির্বাচনে সেলিম উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এবার তিনি মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু শেষ সময়ে আসনটি মহাজোট উন্মুক্ত ঘোষণা করায় এককভাবে ভোটে নেমেছেন। জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা জানান, বিগত সময়ে এ আসন থেকে জাতীয় সংসদে সবচাইতে বেশী সময় প্রতিনিধিত্ব করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গত ১০ টি নির্বাচনে ৪ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদে গেছেন। জকিগঞ্জ-কানাইঘাট জাতীয় পার্টির দূর্গ। সেলিম উদ্দিন এমপি বিগত সময়ের চাইতে সকল এমপির চাইতে সিলেট-৫ আসনে বেশী উন্নয়ন করেছেন। তিনি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীসহ সর্বস্থরের মানুষের ভোট পেয়ে আবারো নির্বাচিত হবেন।

অপরদিকে, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টে ধানের শীষ প্রতীকে একক প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। জমিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে জামায়াতকে হাটিয়ে নিয়ে এসেছে ধানের শীষ। এবারের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের বড় চমক এটাই। র্দীঘ ২৩ বছর পর এ আসনের বিএনপি নেতকর্মীরা ঐক্যফ্রন্ট নেতার হাতে ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে উজ্জীবত হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে সর্বশেষ ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ৪ দলীয় জোট গঠনের কারণে আসনটিতে জামায়াত নেতা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী পাল্লা প্রতীকে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন। এরমধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাফিজ আহমদ মজুমদারের কাছে ৩১ হাজার ৬৩ ভোটে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থীরা জোটের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ২৩ বছর পর এবার বিএনপি থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন। কিন্তু জামায়াত ও জমিয়ত তার পিছু ছাড়েনি। জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও জমিয়তের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের কাছে ধানের শীষ চেয়ে বসে। এতে কপাল পুড়ে বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ মামুনের। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের প্রার্থীকে আউট করে জমিয়তের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে ধানের শীষের চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। এরপরও সন্তুষ্ট বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তারা মনে করেন, জামায়াত থেকে জমিয়ত প্রার্থীকে নিয়ে ভোটের মাঠে সহজে কাবু করা সম্ভব। জামায়াতের হাতে ধানের শীষ তুলে দিলে প্রতীকটাও বির্তকিত হত। যুদ্ধপরাধীর আখ্যা দিয়ে মানুষ জামায়াতকে বর্জন করতো। জমিয়তের প্রার্থীকে দিয়ে বিজয় সম্ভব। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের বেশী ভোটার ইসলামপন্থী দলের সমর্থক। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে মাওলানা উবায়দুল হক উজিরপুরী মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে ক্বওমী ঘরানো বিশাল ভোট ব্যাংক থাকায় তিনি বিজয়ী হন। এবারের নির্বাচনেও জমিয়তের প্রার্থীকে দিয়ে ক্বওমীপন্থী ভোট ধানের শীষের পক্ষে আনা সম্ভব। জামায়াতের প্রার্থী থাকলে তা সম্ভব হত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর